কী খবর, কেমন আছেন?

প্রতি বছরের ন্যায় এবারো রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন প্রধান বিচারপতি। শনিবার বঙ্গভবনে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি সিনহা বঙ্গভবনে পৌঁছান শুভেচ্ছা বিনিময় পর্ব শুরু হওয়ার বেশ খানিকটা পরে।


অন্যান্যদের মতো লাইনে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সাথে করমর্দন করেন। পরে প্রধান বিচারপতি বঙ্গভবনের দরবার হলে যান। শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে আমন্ত্রিত অতিথিদের বঙ্গভবনের দরবার হলে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী একজন জানান, কর্মদনের সময়ে রাষ্ট্রপতি তাকে বলেন,‘কী খবর,কেমন আছেন?’ 
প্রধান বিচারপতির উত্তরের পর রাষ্ট্রপতি তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বঙ্গভবনের দরবার হল দেখিয়ে বলেন, ‘ভালো করে খাবেন।’
এদিকে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।
শনিবার সকাল ১১ টার পর প্রধান বিচারপতি গণভবনে গিয়ে এই শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, বিচারপতিদের অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে মুক্তিযুদ্ধের একক নেতৃত্ব ও সংসদ নিয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার দেয়া পর্যবেক্ষণকে কেন্দ্র করে সরকার ও বিচার বিভাগের মধ্যে টানাপড়েন ও রেষারেষির শুরুর পর এটাই তাদের মধ্যে প্রথম সরাসরি সাক্ষাৎ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন। সরকারের মন্ত্রী-এমপিরাও বিভিন্ন সভা-সমাবেশে প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগের আহ্বান জানাচ্ছেন ও তাকে দেশ ছাড়ার কথাও বলেছেন। এই টানাপড়েনের মধ্যেই শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গণভবনে যান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।
এদিকে প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গেলে সেই ছবি নেওয়ার জন্য বেসরকারি টেলিভিশনের ক্যামেরাপার্সনদের ব্যস্ততাও ছিল চোখে পড়ার মত।
বাসসের খবরে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগ ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে দেশ চলমান অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে মর্যাদার সঙ্গে দাঁড়াতে পারে।
বাংলাদেশ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি একথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এজন্যই আন্তরিক ও নিবেদিতভাবে প্রত্যেকের কাজ করা উচিত, যাতে প্রিয় মাতৃভূমির সমৃদ্ধির পথে যে যাত্রা তা অব্যাহত থাকে এবং বিশ্বে এ দেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে আজ তার সরকারি বাসভবন ‘গণভবনে’ দলীয় নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের সাথে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এসব কথা বলেন।
ঈদুল আজহা মানব কল্যাণের জন্য আত্মত্যাগের একটি মহান পদ্ধতি একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে কোন মানবতার জন্য আত্মোৎসর্গে প্রস্তুত থাকা প্রত্যেক মানুষের কর্তব্য।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে । আমরা এ সমৃদ্ধি ধরে রাখতে চাই। স্বাধীনতার যে মূল চেতনা তা সমুন্নত রেখে বাংলাদেশকে আমি বিশ্বে মর্যদাপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই, জাতি হিসেবেও আমরা বিশ্বের বুকে মর্যদার আসন নিয়ে বাস করতে চাই।’
দেশবাসী ও হজ যাত্রীদের প্রতি ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ দেশ আমাদের, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন অনুযায়ী এদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়তে চাই।’
‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং আমি এই সমৃদ্ধি অব্যাহত রাখবো ইনশাল্লাহ’ বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতি সফলভাবে মোকাবেলা করেছে। সরকার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য নতুন ঘরবাড়ির ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না বলেও তিনি জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা জণগণের মৌলিক অধিকারসমূহ প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে। দেশের মানুষ সরকারের এই সাফল্য ভোগ করছে এবং তারা লাভবান হয়েছে বলে তিনি জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। মাথাপিছু আয় বাড়ার পাশাপাশি দারিদ্র্য বিমোচনের হার শতকরা ২২ ভাগ হ্রাস পেয়েছে, দারিদ্র বিমোচনের হার আরো কমে আসবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হবো।’
শেখ হাসিনা জঙ্গিবাদ থেকে সমাজকে সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং অভিভাবক, শিক্ষক, ইমাম, সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পুরোহিত এবং সর্বস্তরের জণগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তরুণরা যাতে বিপথগামী না হয় সে ব্যাপারে নজর দিতে হবে।
২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি উন্নত ও শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ দেশ উন্নতির পথেও এগিয়ে যাবে।
এ সময় বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা, প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ডা. দীপু মনি, আবদুস সোবহান গোলাপ, অসীম কুমার উকিল, অজিত রায় নন্দী ও বিপ্লব বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এবং বাংলাদেশে বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মিশনের প্রধানদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, আপিল বিভাগ ও হাইকোর্টর বিভাগের বিচারপতিগণ, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারগণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

Comments