জেনে বুঝে ওয়েবসাইট খোলা জরুরী




অনিহা রয়েছে। তবে এটি সম্পর্কে জানা থাকলে সেই অনিহাটা অনেকাংশেই কেটে যাবে। ব্যক্তিগতভাবে ওয়েবসাইট থাকলে ভালো। তবে ব্যবসা চালু করার সঙ্গে সঙ্গে ওয়েবসাইট খোলা জরুরি। এটির সাইট তৈরি করে ডেভেলপাররা। কিন্তু তথ্য আপলোড, ডোমেইন ও হোস্টিং ঠিকঠাক, সাইবার হামলাসহ কিছু বিষয় নিজে না বুঝলে ঝামেলাটা বাধে পরে। এসব সমস্যা থেকে বাঁচতে কী কী বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত, সাইট তৈরির সময়ই কী কী বিষয় নিশ্চিত করা উচিত, ডোমেইন ও হোস্টিং নিবন্ধনের ক্ষেত্রে অনেকগুলো বিষয় মাথায় রাখতে হবে। নাম নির্বাচন: সাধারণত প্রতিষ্ঠানের নামের সঙ্গে মিল  রেখে ডোমেইন কেনা হয়। ডোমেইন নামের মধ্যেও বেশ কিছু ভাগ আছে- যেমন, সাধারণ প্রতিষ্ঠানগুলোর ডোমেইন নাম সাধারণত .com দিয়ে শেষ হয় (যেমন, www.microsoft.com)। সরকারি ওয়েবসাইটগুলো .gov ও লোকাল ডোমেইন নাম দিয়ে শেষ হয় (যেমন-www.ictd.gov.bd)। আবার সংস্থাগুলোর ওয়েবসাইট সাধারণত .ড়ৎম (যেমন, www.undp.org) দিয়ে শেষ হয়। তবে ইন্টারনেটে .com ডোমেইনই জনপ্রিয়। ডোমেইন কেনার সময় ব্যবহারকারীর পছন্দই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ডোমেইন নাম প্রতিষ্ঠানের নামের সঙ্গে মিলিয়ে রাখা উচিত। অনলাইন থেকে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ডোমেইন কিনলে খরচ পড়ে ১ থেকে ১৫ ডলার। বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো ৮০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যেই ডোমেইন বিক্রি করে। সম্ভব হলে নিজে অনলাইন থেকে ডোমেইন কেনা ভালো। তবে ক্রেডিট কার্ড বা অনলাইন পেমেন্ট সুবিধা না থাকলে ভালো কম্পানির দ্বারস্থ হতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ সাপোর্টের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। ডোমেইন কেনার সময় সহজবোধ্য নাম নির্বাচন করতে হবে, যাতে ভিজিটর সহজেই নাম মনে রাখতে পারে। আর কম্পানির হলে কম্পানির নামেই কেনা উচিত। শুধু নামটি না পেলে সঙ্গে অন্য কিছু যুক্ত করে ডোমেইন কিনতে পারেন। তাড়াহুড়া করে কিংবা জনপ্রিয় কোনো কম্পানির নামের সঙ্গে মিল রেখে ডোমেইন কিনতে যাবেন না। যার কাছ থেকে ডোমেইন কিনবেন তার সঙ্গে দাম নিয়ে আলোচনা করে নেবেন, রিনিউ চার্জ কত নেবে সেটিও জানবেন। আর অবশ্যই পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবেন।ওয়েব হোস্টিং : হোস্টিং মূলত অনলাইনে তথ্য আপলোড করার সার্ভার। এ ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটের মালিক যত মেগাবাইট বা গিগাবাইট ওয়েব হোস্টিং কিনবেন তিনি ততটুক তথ্যই আপলোড করতে পারবেন। অনেকটা এ রকম, একজন ব্যবসায়ী যত বড় গোডাউন ভাড়া নিচ্ছেন, ততটুকুই মাল রাখার সুযোগ পাচ্ছেন। ব্যক্তিগত আর ছোট প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে ১ থেকে ৫ গিগাবাইট হোস্টিংই যথেষ্ট। যেসব প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে একটু বেশি ছবি আপলোড করতে হবে সেগুলোর ক্ষেত্রে হোস্টিং ৫ গিগাবাইট থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী নেওয়াটাই ভালো। অনেকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ওয়েব হোস্টিং নিচ্ছেন। মনে রাখতে হবে, প্রয়োজনের বেশি ওয়েব হোস্টিং নিলে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায় না, অতিরিক্ত কিছু টাকাই শুধু নষ্ট হয়। ১ গিগাবাইটের ক্ষেত্রে এক হাজার টাকা থেকে শুরু করে ওয়েব হোস্টিং পাওয়া যায়।হোস্টিং কেনার আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হয়। যেসব ওয়েবসাইটে একই সময়ে কয়েক হাজার ব্যবহারকারী থাকে, সেগুলোর ক্ষেত্রে ডেডিকেটেড সার্ভার কিনতে হয়। এ ধরনের একটি সার্ভারের পেছনে প্রতি মাসে দেড় শ থেকে হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত খরচ হতে পারে। যেসব ওয়েবসাইটে ব্যবহারকারী কম, তাদের শেয়ারড সার্ভার হলেই চলে। ডোমেইন ও হোস্টিং স্পেস কেনার আগে অবশ্যই সে প্রতিষ্ঠানের সেবার মান যাচাই করে নেওয়া উচিত। ওই প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিক্রয়োত্তর সেবা দেবে কি না সেটিও যাচাই করে নিতে হবে। বিক্রয়োত্তর সেবার জন্য ব্যবহারকারীকে অতিরিক্ত কোনো টাকা পরিশোধ করতে হবে কি না বা হলেও তার পরিমাণ নির্দিষ্ট করে নিতে হবে। ওয়েবসাইটে কোনো পরিবর্তন আনার জন্য প্রয়োজন ওয়েবসাইট কন্ট্রোল প্যানেল। আবার ডোমেইনটি অন্য প্রতিষ্ঠানের সাইটে হোস্ট করার জন্যও ডোমেইন কন্ট্রোল প্যানেলের প্রয়োজন। এ জন্য যে প্রতিষ্ঠান থেকে সেবাটি নেবেন সেখান থেকে অবশ্যই ডোমেইন ও হোস্টিংয়ের পূর্ণ কন্ট্রোল প্যানেল (ইউজার নেইম, পাসওয়ার্ড) নিজের কাছে রাখবেন। অনেক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের ধরে রাখার জন্য কন্ট্রোল প্যানেলে প্রবেশাধিকার দেয় না। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান এড়িয়ে চলা উচিত।হোস্টিং কেনার সময় আপনার বাজেট, হোস্টিংয়ের পরিমাণ, ব্যান্ডউইডথ, হোস্টিংয়ের আপটাইম অর্থাৎ সাইট কতক্ষণ লাইভ থাকবে, মানিব্যাক গ্যারান্টি, সাপোর্ট, কম্পানির অবস্থা ও গ্রাহক সন্তুষ্টি, হোস্টিংয়ের ধরন, ফিচার, সার্ভার লোডিং টাইম, সার্ভার কনফিগারেশন, ই-মেইল সুবিধা, সাব-ডোমেইন বা একাধিক ডোমেইন ব্যবহার করার সুবিধা ইত্যাদি পাওয়া যাবে কি না বিষয়গুলো ভালোভাবে জেনে নেবেন।ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট : যারা কম বাজেটের মধ্যে ডায়নামিক ওয়েবসাইট (প্রতিনিয়ত তথ্য পরিবর্তন করতে হয় এ ধরনের সাইট)  তৈরি করতে চান, তারা ওয়ার্ডপ্রেস এবং জুমলাসহ ওপেনসোর্স কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বা সিএমএস ব্যবহার করতে পারেন। আর ওয়েবসাইট ডিজাইনের আগে অবশ্যই ডেভেলপারকে আপনার চাহিদা ভালোভাবে বলতে হবে। তাহলে ডেভেলপারই নিজ থেকে পছন্দ করে নিতে পারবে উপযুক্ত প্ল্যাটফর্মটি। সিএমএসে তৈরি ওয়েবসাইট সহজেই যে কেউ কোডিংজ্ঞান ছাড়াই নানা তথ্য আপলোড বা পরিবর্তন করতে পারেন। তাই সাধারণ ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে সিএমএস দিয়ে সাইট ডেভেলপ করা ভালো। খরচও কম হয়। আর যাঁরা সম্পূর্ণ ইউনিক ওয়েবসাইট ডিজাইন ও ডেভেলপ করতে চান, তারা ভালো কোনো ওয়েব ডেভেলপার ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্টের ধরন অনুযায়ী ২০-৩০ হাজার থেকে শুরু করে কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে এসব ওয়েবসাইট তৈরিতে। আপনি যাতে সহজেই ওয়েবসাইটের তথ্য আপডেট করতে পারেন, তার জন্য ডেভেলপার ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বলবেন, যাতে সাইটটি ডায়নামিক করে। ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে যাতে সব কনটেন্ট পরিবর্তন করতে পারেন সেটি নিশ্চিত করবেন। এ ছাড়া বর্তমানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে। সব ডিভাইস ও ব্রাউজার উপযোগী (রেসপনসিভ) হতে হবে।নিরাপত্তা: শুধু ওয়েবসাইট তৈরি করলেই হবে না, এর নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে সিএমএস দিয়ে তৈরি ওয়েবসাইট প্রায়ই হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটে। তাই এসব বিষয়ে ভালোভাবে নিশ্চয়তা নিশ্চিত করতে হবে। যারা নতুন সাইট তৈরি করেছেন, তাদের বেসিক কিছু নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। ভালো মানের ডেভেলপার না হলেও যে কেউ এসব নিরাপত্তা মেনে চলতে পারেন। অনেকেই খরচ কমের কারণে নিম্নমানের কিংবা বেনামি ওয়েব হোস্টিং ব্যবহার করেন। এসব ওয়েব হোস্টিং সেবাদাতা প্রতিটি সাইটের জন্য ভালো নিরাপত্তা দিতে পারে না। প্রায়ই এসব হোস্টিংয়ে থাকা ওয়েবসাইট হ্যাকিংয়ের শিকার হয়। তাই যেসব হোস্টিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ভালো ও সাইটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, তাদের সেবা নেওয়া উচিত। প্রায়ই সিএমএসগুলো তাদের বিভিন্ন ত্রুটি সমাধান ও ফিচার আনার মাধ্যমে নতুন আপডেট ছাড়ে। তাই আপডেট আসার পরই আপডেট করা ভালো। পুরনো সংস্করণগুলোর নানা ত্রুটি খুঁজে বের করে হ্যাকাররা সেটি হ্যাকিংয়ের চেষ্টা করে।অনেকেই ওয়েবসাইট তরির সময় ইউজার নেইম হিসেবে অ্যাডমিন ব্যবহার করেন। তবে সাইটের নিরাপত্তায় অ্যাডমিন ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ হ্যাকাররা সাধারণত অ্যাডমিন দিয়েই সাইট হ্যাকিংয়ের চেষ্টা করে। নতুন ওয়েবসাইট তৈরির ক্ষেত্রে অনেকেই বিনা মূল্যের থিম ব্যবহার করেন। এসব থিমে অনেক ক্ষেত্রেই লুকানো কোড থাকে, যেগুলো আপনার ওয়েবসাইটের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি করে নিতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, ফ্রি থিমের ওয়েবসাইটগুলো রিডাইরেক্ট হয়ে অন্য ওয়েবসাইটে চলে যাচ্ছে। আবার কখনো কখনো সাইটের বিভিন্ন স্থানে উল্টাপাল্টা কোড কিংবা বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে। এসব ঝক্কিঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে বিনা মূল্যের থিম ব্যবহার না করাই ভালো। আর একেবারেই থিম কিনে ব্যবহার সম্ভব না হলে ওয়ার্ডপ্রেস বা অন্য সিএমএসগুলোর নিজস্ব থিম ব্যবহার করা যেতে পারে। হ্যাকাররা যাতে ইউজার নেইম ও অনুমানের ওপর ভিত্তি করে পাসওয়ার্ড দিয়ে বারবার লগইন করার চেষ্টা করতে না পারে, সেই ব্যবস্থা করা উচিত। এ ক্ষেত্রে প্লাগইন ব্যবহার করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে কেউ কতবার ভুল পাসওয়ার্ড দিয়ে চেষ্টা করার পর আইপি ব্লকড হয়ে যাবে সেটি চালু করা যায়। ফলে কেউ একাধিকবার ভুল পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করার চেষ্টা করলে সে আর ওই আইপি থেকে লগইন করতে পারবে না। অনেকেই নানা সুবিধার জন্য কোনো প্লাগইন পেলেই সাইটে ইনস্টল করেন। এটি ঠিক নয়। কোনো প্লাগইন ইনস্টল করার সময় অবশ্যই সেটি নিরাপদ কি না, অফিশিয়াল প্লাগইন কি না কিংবা ওয়ার্ডপ্রেসের প্লাগইন গ্যালারিতে আছে কি না সেটি দেখে নেওয়া উচিত। কারণ ফ্রি থিমের মতোই এসব প্লাগইনে অনেক সময় হ্যাকিং কিংবা ট্র্যাকিং কোড বসানো থাকে, যা আপনার ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা দুর্বল করতে পারে।  হোস্টিং সমস্যা কিংবা হ্যাকিংয়ের কারণে যেকোনো সময় ওয়েবসাইটের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেহাত হয়ে যেতে পারে। তাই ভোগান্তি কিছুটা কমাতে নিয়মিত সাইটের ব্যাকআপ রাখা উচিত। কোনো কারণে সাইটের ডাটা মুছে গেলে এই ব্যাকআপ ফাইল দিয়েই সাইটকে রিকভার করা যাবে। সবচেয়ে ভালো হয় হোস্টিং প্রভাইডারকে নিয়মিত সাইটের ব্যাকআপ রাখার বিষয়টি 

Comments